জাতীয় শিক্ষক দিবস -২০২২
লেখক -রাজু আহমদ
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আগামী ২৭ অক্টোবর দেশব্যাপী শিক্ষক দিবস উদযাপন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ২০০৩ সালে ১৯ জানুযারি বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজকে যথাযোগ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার অঙ্গীকার নিয়ে তৎকালীন সরকার এ দিবসটি চালু করেন।
এছাডা আন্তর্জাতিকভাবে ৫ই অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করা হয়ে থাকে।
এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে “ শিক্ষকদের হাত ধরেই শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তনের শুরু ’’।
এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সব মানুষকে এটাই বলা হচ্ছে যে শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন করতে পারেন শিক্ষকরাই।
শিক্ষাক্ষেত্রে যেকোনো পরিবর্তন অবশ্যই শিক্ষকদের দিয়ে শুরু করতে হয়, অর্থাৎ শিক্ষকের পরিবর্তন হলেই
শিক্ষার্থীর পরিবর্তন হয়, আর তখনই শিক্ষার পরিবর্তন ঘটে আর বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে দেশের উন্নয়নে।
তাহলে চলুন শিক্ষক দিবস স্ট্যাটাস গুলো দেখে নেইঃ-
১। সত্যিকারের শিক্ষক তাঁরাই, যাঁরা আমাদের ভাবতে সাহায্য করেন।‘‘ সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ’’
২। একজন শিক্ষক সামগ্রিকভাবে প্রভাব ফেলে, কেউ বলতে পারে না তার প্রভাব কোথায় গিয়ে শেষ হয়। ‘‘হেনরি এডাম’
৩। মাঝারি মানের শিক্ষক বলেন, ভাল শিক্ষক বুঝিয়ে দেন, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক করে দেখান। মহান শিক্ষক অনুপ্রাণিত করেন। ” উইলয়াম আর্থার ওয়ার্ড’’
৪। শিক্ষক হলেন পরিচালক ও নির্দেশক। তিনি নৌকাটি চালিয়ে যান, কিন্তু চালিকা শক্তির উৎস হল শিক্ষার্থী।‘জন ডিউই’
৫। আমাদের মনে রাখতে হবে: একটি বই, একটি কলম, একটি শিশু এবং একজন শিক্ষক বিশ্বকে পরিবর্তন করতে পারে।” –
মালালা ইউসুফজাই
৬। একজন শিক্ষার্থীর মা হলেন তার প্রথম শিক্ষক, আর একজন শিক্ষক হচ্ছেন তার দ্বিতীয় মা।
৭। আমি বরাবরই অনুভব করেছি যে শিক্ষার্থীর জন্য সত্য পাঠ্য পুস্তকই তাঁর শিক্ষক । ‘মহাত্মা গান্ধী’
৮। ভাল শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে কীভাবে সেরাটা বের করে আনতে হয় তা জানেন। ‘ চার্লস কুরাল্ট’
৯। শিক্ষা সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র, যার সাহায্যে পৃথিবী পাল্টে ফেলা যাবে। ‘নেলসন ম্যান্ডেলা’
১০। একজন মহান ও আদর্শ শিক্ষকের মধ্যে কয়েকটি বিশেষ গুণ অবশ্যই থাকা উচিত করুণা, জ্ঞান এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তি।
‘এ. পি. জে. আবদুল কালাম’
শিক্ষক দিবস ঃ
একজনের ব্যক্তিত্ব বা ভবিষ্যৎকে সঠিক এবং সুন্দর রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুর বা শিক্ষকের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে। শুধুমাত্র একজন শিক্ষকই একজন ব্যক্তিকে জীবনের সঠিক পথ বেছে নেওয়ার বুদ্ধি , আদেশ বা উপদেশ দিতে পারেন। সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উঠার এটাই একমাত্র পথ। এই কারণেই আমাদের দেশে শিক্ষকদের সম্মান করা হয় এবং তাদের পিতামাতার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা দেওয়া হয়। শিক্ষকের গুরুত্ব বোঝাতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর শিক্ষক দিবস বা পালিত হয়।
“শিক্ষক মোদের প্রাণের গুরু, আর্দশের-ই প্রতীক
তার দেখানো পথে হাঁটে ছাত্র-ছাত্রী পথিক।
শিক্ষক জ্বালান মনে প্রদীপ প্রতিভা বিকাশে,
শিক্ষক ছড়ান জ্ঞানের আলো অশিক্ষার আকাশে।
শিক্ষক হলেন আলোর পথের সত্য নির্ভীক যাত্রী
তার অনুসরণে পথ চলে সকল ছাত্র-ছাত্রী।( সংগ্রৃহীত )
শিক্ষকতা হচ্ছে সম্মানজনক একটি মহান পেশা এবং পৃথিবীর সকল পেশার সেরা পেশা। শিক্ষকরা হচ্ছেন সভ্যতার ধারক-বাহক। শিক্ষক শুধু শিক্ষাদানই করেন না, তিনি মানুষ গড়ার কারিগরও। পিতা-মাতা আমাদের জীবনদান করেন ঠিকই। শিক্ষকরা সেই জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। শিক্ষকরা স্বমহিমায় বিশুদ্ধ জ্ঞান, মানবিক আর নৈতিক শিক্ষায় সুশিক্ষিত এবং দিক্ষীত করে গড়ে তুলেন দেশের যোগ্য নাগরিক। শিক্ষা যেহেতেু জাতির মেরুদন্ড- শিক্ষকরা হচ্ছেন এই মেরুদন্ড- গড়ার কারিগর।
এ সমাজের মধ্যে নৈতিক বিচারে শিক্ষকদের চেয়ে সম্মানিত এবং শিক্ষকতার চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পেশা দ্বিতীয়টি নেই। পৃথিবীতে যতগুলো সম্মানজনক পেশা আছে এসব পেশার মধ্যে শিক্ষকতা সর্বোচ্চ সম্মানিত পেশা। একজন শিক্ষক সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের কাছে অত্যন্ত মর্যাদা ও সম্মানের পাত্র।
শিক্ষক হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। তারা সুশিক্ষায় শিক্ষিত। তাদের হাত ধরেই মূলত আমরা জ্ঞানের মহাসাগর পাড়ি দেই। শিক্ষকরা প্রদীপের মত নিজেকে জ্বালিয়ে অন্যকে আলো দান করেন, অর্থা শিক্ষক অমর, তিনি বেঁচে থাকেন শিক্ষার্থীদের আদর্শের মাধ্যমে শিক্ষকরা শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষা দেন তা কিন্তু নয়। তারা জীবনের সর্বক্ষেত্রে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেন। একজন আদর্শ শিক্ষকের কিছু কাজ ও দায়বদ্ধতা আছে। এ কাজ ও দায়বদ্ধতা সহকর্মীদের কাছে, সমাজের কাছে, দেশ ও জাতির কাছে, আগামি প্রজন্মের কাছে। একজন সফল মানুষের পেছনে শিক্ষকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।
দুঃখজনক হলেও সত্য যে, শিক্ষকতার পেশা উত্তম পেশা হলেও এতোবছর পরেও বাংলাদেশের শিক্ষকদের প্রকৃত মর্যাদা আজ প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষকদের প্রাণের এক দফা এক দাবী, জাতীয়করণ। কিন্তু সে স্বপ্ন যে কবে সত্যি হবে, কবে আসবে শিক্ষকদের সেই সুদিন–
শিক্ষাঙ্গনসহ নানা জায়গায় শিক্ষকরা আজ অপমানিত হচ্ছেন! আসলে শিক্ষকসহ গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ নামক জিনিসগুলোকে আজ কি শুণ্যেও কোঠায়? মনে রাখতে হবে যে, শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। তাঁদের যথাযথ সম্মান দিতে হবে।
আর এই দিবসের মধ্যদিয়ে সকল শিক্ষকবৃন্দের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
লেখক –
রাজু আহমদ
সহকারি প্রধান শিক্ষক
রাজঘাট জাফরপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়
অভয়নগর, যশোর
মন্তব্য করুন