সঠিক সময় প্রধান শিক্ষক প্রতিষ্ঠানে আসেন না,আবার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রতিষ্ঠান ছেড়ে সময়ের আগে চলে যান
নিজস্ব প্রতিবেদক-
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা সরকার নির্ধারিত সময়সূচীর মতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসেন না ,আবার অনেক সময় সঠিক সময় আসলেও তারা তড়িঘড়ি করে নিজেদের কাজের জন্য স্কুলের কাজ বলে ফাঁকি দিয়ে স্কুল ছেড়ে চলে যান ।
আবার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধানরা প্রতিষ্ঠানে না আসে স্কুলের কাজ বলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার কথা বলে বিভিন্ন সময় নিজেদের বাড়ির কাজে নিয়োজিত থাকেন। আবার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা নিজেদের ক্ষমতার বলে বা ক্ষমতাসীন দলের বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সময় মতন না এসে বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সময় মতন না থেকে নিজের খেয়াল খুশির মতন আসা-যাওয়া করেন।
প্রধান শিক্ষকদের এসব দুর্নীতির কথা বলার বা অভিযোগের কোন জায়গা সহকারী শিক্ষক /কর্মচারীরা খুঁজে পান না তারা।
যদি প্রধান শিক্ষকদের দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ করা জায়গা থাকতো তাহলে দেখা যেত যে প্রধান শিক্ষকদের নামে ঝুড়ি ঝুড়ি ভরা অভিযোগের ফাইল জমা হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক রা বলতে চান যে যদি প্রধানশিক্ষকদের অনিয়ম ও দুর্নীতি বা প্রতিষ্ঠানের সময় মতন আসা যাওয়া একটা অভিযোগের জায়গা যদি আমরা খুঁজে পেতো তাহলে হয়তো প্রধান শিক্ষকরা এই দুর্নীতিগ্রস্ত হতে পারত না।
তারা নিজেদেরকে সামলে নিতে পারত তাই সহকারী শিক্ষক ও কর্মচারীরা বললেন যে প্রধান শিক্ষকদের নামে গোপন প্রতিবেদনের জায়গা যদি থাকতো বা অভিযোগের জায়গা যদি থাকে তাহলে আজ প্রধান শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়াতে পারত না এটা তারা বলতে চায় যে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ভেবে দেখুক।
এগুলো আমরা সরজমিনে দেখতে পেয়েছি
নিজের খেয়াল খুশি মতো মাসে দুই-একদিন বিদ্যালয়ে যান প্রধান শিক্ষক। তার পরিবর্তে ক্লাস নিতে রেখেছেন একজন প্রক্সি শিক্ষক। অফিসের চাবি রাখেন নিজের কাছে। ফলে অন্য শিক্ষকদের সকালে স্কুলে এসে বসে থাকতে হয় বারান্দায়। এমন চিত্র নেত্রকোণার মোহনগঞ্জের আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এসব অনিয়মের অভিযোগ করা হয়েছে প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শওকত আলীর বিরুদ্ধে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা মেলে মে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে গেলে এলাকাবাসী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা জানান, অভিযোগের বিষয়ে বললেও প্রধান শিক্ষক কারও কথা শোনেন না। স্কুলে ক্লাস নেয়ার জন্য এলাকার অপেক্ষাকৃত কম শিক্ষিত এক নারীকে রেখেছেন। প্রায়দিনই দুপুরে স্কুল ছুটি দেয়া হয়। আমাদের ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা খুবই বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী বাধ্য হয়ে অন্য স্কুলে চলে যাচ্ছে। এ নিয়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো ফল হয়নি। বছরের পর বছর এভাবেই চলছে এই স্কুলের পাঠদান। এ অবস্থা থেকে আমরা মুক্তি চাই।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেড়শ’ শিক্ষার্থী রয়েছেন তাদের পাঠদানে প্রধান শিক্ষকসহ দুজন শিক্ষক রয়েছেন।
বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য মো. মোকারম হোসেন বলেন, প্রধান শিক্ষক শওকত আলী বসবাস করেন মোহনগঞ্জ পৌরশহরে। মাসে এক-দুই দিন বিদ্যালয়ে আসেন। প্রক্সি শিক্ষকও নিয়মিত স্কুলে আসেন না। অপর সহকারী শিক্ষক শাহীনুর মিয়াও আসেন না নিয়মিত।
বিদ্যালয়ের পাশে থাকা মনোহারি ব্যবসায়ী আজমপুর গ্রামের আবুল কাশেম বলেন, প্রধান শিক্ষককে মাসে দুই-একবার দেখি স্কুলে আসতে। এই স্কুলে এক সময় অনেক শিক্ষার্থী ছিলো। পড়াশোনা হয় না বলে অনেক অভিভাবক তাদের বাচ্চাদের অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন।
এছাড়া আজমপুর গ্রামের আল আমিন ও রহম আলী জানান, সপ্তাহে কয়েকদিন বন্ধ থাকে। যেদিন খোলা হয় সেদিন দুইটার আগেই ছুটি দিয়ে দেয়। আমাদের ছেলে-মেয়েদের শিক্ষা জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছে।
সহকারী শিক্ষক শাহীনুর মিয়া বলেন, প্রধান শিক্ষক অফিসের চাবি নিজের সঙ্গে নিয়ে যান। আমরা বারান্দায় বসে সময় কাটাই। আমি নিয়মিত স্কুলে আসি, মাঝে মধ্যে একটু সমস্যা হয়। তবে প্রধান শিক্ষক স্কুলে কম আসেন।
প্রক্সি শিক্ষক পপি আক্তার বলেন, আমি এই স্কুলে দুই হাজার টাকা বেতনে শিক্ষার্থীদের পড়াই। প্রায়দিনই সকালে এসে আমিই স্কুল খুলি। সহকারী শিক্ষক আরও পরে আসেন। আর প্রধান শিক্ষক তেমন আসেন না। আমি এই চাকরির পাশাপাশি একটি এনজিওতে চাকরি করি, শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াই। সে কারণে অনেকদিন দেখা যায় সকালে আমি স্কুলে আসতে পারি না। ফলে স্কুল খোলা হয় দেরিতে, অথবা কেউ না আসলে স্কুল বন্ধ থাকে।
আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) শওকত আলী নিয়মিত স্কুলে না যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, মাঝে মধ্যে নানান কারণে স্কুলে যেতে পারি না। যাতায়াত সমস্যার কারণে এমনটা হয়। তবে বিদালয়ের অফিস কক্ষের চাবি সহকারী শিক্ষকের কাছেই থাকে। শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক কম তাই পড়াশোনার স্বার্থে প্রক্সি শিক্ষক রাখা হয়েছে। স্কুলের নানা বিষয় নিয়ে দুটি পক্ষ রয়েছে, বন্ধ থাকার বিষয়টি তাদের অপপ্রচার।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, বিষয়টি স্থানীয়ভাবে অবগত হয়ে প্রধান শিক্ষক শওকত আলী ও সহকারী শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষকদের সঠিক সময়ে স্কুলে যেতে হবে, নিয়মানুযায়ী ক্লাস নিতে হবে এর ব্যত্যয় ঘটলে ছাড় দেয়া হবে না।
মন্তব্য করুন