মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষকদের দিকে তাকান
একটা সময় ছিল যখন সবকিছু প্রচলিত অ্যানালগ পদ্ধতিতে সম্পন্ন হত। দিন এখন বদলে গেছে । পুরাতন ধ্যান ধারনা এখন লুফে নিয়েছে জ্ঞান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ।
বাংলাদেশও এর থেকে পিছিয়ে নেই। বর্তমান সরকার টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুফল ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। দেশের এমন কোন ক্ষেত্র নেই যেখানে এই সুফল পৌঁছায়নি। দেশতো ডিজিটাল হয়েছে আগেই, এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। সে স্বপ্ন যাত্রাও সময়ে আসবে হাতের মুঠোয় এ আশা নয় বিশ্বাস। প্রদীপের নিচে যেমন অন্ধকার থাকে, ঠিক তেমনি বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক সমাজ ছিটকে গেছে সুফল ভোগ করার প্রচলিত ধারার বাইরে।
তাদের জীবনমান অন্ধকার চোরাগলির মাঝে আলোর দিশা হাতড়ে বেড়াচ্ছে। অজানা শঙ্কা কিন্ত বুক ভরা আশা নিয়ে তারা আপনার দিকে চেয়ে আছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে সারা বিশ্ব যে টালমাটাল অর্থনীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। সব কিছুর দাম এখন ঊর্ধ্বমুখী ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একজন বেসরকারি এমপিওভুক্ত সহকারি শিক্ষক তার চাকরি জীবনের শুরুতে মাত্র (১২৫০০/-) সাড়ে বারো হাজার টাকা বেতন পান। দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে মানুষ গড়ার কারিগর বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক এই সামান্য বেতন দিয়ে কিভাবে চলে তা বলা বর্ণনাতীত! নানা অভাব-অনটন আর নিধারুণ কষ্টে চলছে তাদের জীবনমান। একদিকে পরিবারের ভরণ-পোষণ করতে তাদের জীবনে যেমন উঠেছে নাভিশ্বাস। তার উপর মাত্র ২৫ শতাংশ ঈদ বোনাস যেন মরার উপর খাড়ার ঘা।
১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া আর ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এ যেন রীতিমতো প্রহসন। এই সামান্য টাকায় যেখানে শিক্ষকদের জীবনমান যেখানে স্থবির,সেখানে আধুনিক মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদান রীতিমতো বিলাসিতা। তাছাড়া অবসর কল্যাণ ট্রাস্টে শিক্ষক-কর্মচারিদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১০ শতাংশ কেটে রাখলেও ৬ শতাংশের বেশি সুবিধা এখনও দেওয়া হয় না।
চলতি বাজেটে শিক্ষাখাতে মোট ৭১ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে । যা মোট বাজেটের ১১.৯ শতাংশ ও জিডিপির প্রায় ২.১০ শতাংশ।
যদিও শিক্ষাক্ষেত্রে মোট বাজেটের ২০ শতাংশ এবং জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশও সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করেছে। কিন্ত পরিতাপের বিষয় স্বাধীনতার ৫২ বছর পরো শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের কাঙ্ক্ষিত বাজেট পেশ করা হয়নি। অভিন্ন সিলেবাস তারপরও সরকারি আর বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য এমন প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, সেটা সহজেই অনুমেয়। যে শিক্ষকদের ক্লাসে পাঠদান করার কথা তারা আজ নিজেদের আত্মসম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে এহেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি বিরোধী দলে থাকার সময় জোর দিয়ে বলেছিলেন, ‘আমরা ক্ষমতায় গেলে কোন দাবী নিয়ে শিক্ষকদের রাস্তায় দাঁড়াতে হবে না।’ সে কথা ফলাও করে ছেপেছিলো দেশের সব নামকরা জাতীয় দৈনিক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টানা তিন মেয়াদে আপনি ক্ষমতায়। তার উপর আসন্ন জাতীয় নির্বাচন দরোজায় কড়া নাড়ছে। বেসরকারি শিক্ষকরা আপনার দিকে চেয়ে আছে। তারা বিশ্বাস করে বেসরকারি শিক্ষার জাতীয়করণ বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত দিয়েই আসবে। আপনার ইচ্ছায় প্রাথমিক শিক্ষা যেভাবে জাতীয়করণ হয়েছে, ঠিক সেভাবে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ করে ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে প্রজ্বলিত হোক আপনার নাম। আর আপনি বেসরকারি শিক্ষার সাথে জড়িত সাড়ে ৫ লক্ষ শিক্ষক ও তার পরিবারের মণিকোঠায় থাকুন অমলিন শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়, সম্মানে আর পূর্ণতায়।
লেখক –
মিজানুর রহমান (রুবেল)
সহকারি শিক্ষক
গোহালিয়াবাড়ী ফাজিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা
কালিহাতী, টাঙ্গাইল ।
মন্তব্য করুন