শিক্ষায় মানবিকতা, মূল্যবোধ ও দেশপ্রেম সৃষ্টি করতে হবে।
সরকারি করা হলে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মান নিচে নেমে যায় তবে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি করে দেয়া হচ্ছে না কেন? জনগণের ট্যাক্সের টাকা খরচ করে দিন দিন মানহীন সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে কেন? আসলে শিক্ষার হ-য-ব-র-ল অবস্থার জন্য দীর্ঘ সময় ধরে শিক্ষা প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা দায়ী।
পূর্ব পাকিস্তান আমলের ছয়টি থেকে এখন বাংলাদেশে দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ অর্ধ শতাধিক, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজও একই হারে বেড়েছে; কিন্তু মান কোথায়? আমাদের মেধাবীরা আজ দলে দলে আমেরিকা, ইউরোপ এমনকি মালয়েশিয়া চলে যাচ্ছে কেন? দেশের উচ্চ মাধ্যমিকে লাখ লাখ আসন খালি কেন?
মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে হাজার হাজার বেকার দিশেহারা কেন! শিক্ষকতা থেকে মেধাবীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কেন? প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ তথা অবৈতনিক করা হলেও দেশে লক্ষাধিক কিন্ডার গার্টেন জন্ম নিলো কীভাবে? যেখানে হাজার হাজার টাকা খরচ করে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত সবাই তাদের সন্তানদের পড়াচ্ছে।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বিমুখ হয়ে লাখ লাখ শিক্ষার্থী কিন্ডার গার্টেনে চলে গেছে কেন? এসবই আমাদের রাজনৈতিক ও শিক্ষা প্রশাসনের চরম ব্যর্থতা নয়কি? দেশের অর্থনীতির চাকা তো সচল রেখেছে প্রবাসী ভাইবোনেরা। তারা তো অধিকাংশই স্বল্প শিক্ষিত; কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে বা নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তের সন্তান। তারা কঠোর পরিশ্রম করে বিদেশ থেকে দেশে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাচ্ছে , অপরদিকে তথাকথিত শিক্ষিত চোরেরা দেশ থেকে তা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে! সত্যি কথা বলতে কি, আমাদের শিক্ষা এদেশের নাগরিকদের মধ্যে দেশপ্রেম ও মানবিক মূল্যবোধ তৈরি করতে পারে নাই।
কাজেই আমাদের শিক্ষায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে। শিক্ষার বহুধা বিভক্তি নিরসন করে বৈষম্যহীন মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টিকারী শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য কাজ করতে হবে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সম্পূর্ণ শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে এবং সরকারি বেসরকারি বলে আলাদা করে বৈষম্য তৈরি করা যাবে না। কাজেই উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করা ছাড়া আর পেছনে তাকাবার সুযোগ নেই।
মন্তব্য করুন