জাতীয়করন প্রসংগ
———— অধ্যক্ষ এডভোকেট মোঃ সেলিম ভূঁইয়া
বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীরা যখন সরকার থেকে বেতনের ৭০% পেতেন তখন ১৯৮৮ দিকে রাজশাহীর নজরুল ইসলাম (বাশিস এক অংশের মহাসচিব) সর্বপ্রথম বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীদের চাকুরী জাতীয়করণের শ্লোগান তোলেন। তখন অপর ২ অংশ অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন শিক্ষক সমিতি এবং শেখ আমানুল্লাহ সাহেবের(তখন আমি ছিলাম এ সংগঠনের গনসংযোগ সচিব, এবং কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন মাত্র ১৯ জন)নেতৃত্বাধীন সংগঠন সমূহের দাবী ছিলো ** শিক্ষা জাতীয়করণের লক্ষ্যে বেতনের সরকারী অংশ ১০০%সহ অন্যান্য দাবী। তখন বাকশিসের নেতৃত্ব দিতেন প্রিন্সিপাল শহীদুল্লাহ ও অধ্যাপক কাজা ফারুক আহমেদ। বাকশিস মোটামুটি কলেজের একক নেতৃত্ব দিতেন যদিও প্রিন্সিপাল শরীফুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আরেকটি সংগঠন ছিলো।
— তখন বাকশিস ও শেখ আমানুল্লাহর নেতৃত্বাধীন সংগঠনের সহিত সরকারী কলেজ ও সরকারী স্কুল এবং কর্মচারীদের নিয়ে একটি শক্তিশালী সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ছিলো। প্রেসিডেন্ট এরশাদ ও মাওলানা মান্নান সাহেবও কিছুদিন ফেডারেশনের নেতৃত্বে ছিলো।
সংগঠন নিয়ে বলতে গেলে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন তাই আবার মূল প্রসংগে চলে আসি। অন্যান্য সংগঠন সমূহের বক্তব্য ছিলো নজরুল সাহেবের জাতীয়করণের স্লোগানটি সময়োচিত নয়। যুক্তি ছিলো যেহেতু শিক্ষকরা এখনও ১০০% বেতন পান না সেহেতু জাতীয়করন করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। সে লক্ষ্য নিয়েই ১০% এ-র আন্দোলন চলতে থাকে। ১০% এজন্য বললাম কারন প্রতি আন্দোলনেই সরকার ১০% দিয়ে আন্দোলন থামিয়ে দিয়েছেন।
১৯৯৪ শিক্ষক আন্দোলনে ছোট বড় সকল শিক্ষক সংগঠন মিলে শিক্ষক সংগ্রাম লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করেন। চলতে থাকে দুর্বার আন্দোলন। ৩ জন্ আহ্বায়কের মধ্যে অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান সাহেব ছিলেন অন্যতম। এক পর্যায়ে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। ৪২ দিন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলে। এক পর্যায়ে সরকার নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনায় বসেন এবং ৩ টি দাবী পূরন করেন। পূরন করা দাবীগুলো ১) ১০% বেতন, ২) একটা ইনক্রিমেন্ট, ৩) ৫০০/- চিকিৎসা ভাতা প্রদান।
সেদিনের ইনক্রিমেন্ট আজও সে অবস্থায় আছে।
প্রতিটা আন্দোলনে যেহেতু আমি সক্রিয়ভাব অংশগ্রহণ করেছি তাই প্রসংগক্রমে এগুলো এসে যায়।
—- তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিলো কিন্তু কামরুজ্জামান সাহেবের নেতৃত্বের বিষয়ে কোন সংগঠন প্রশ্ন তোলেনি
শিক্ষকতার পেশায় নূতন যোগ দেয়া শিক্ষক ভাইদের সেন্টিমেন্টের প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে এবং থাকবে।কিন্তু ফেসবুকে যখন জাতীয়করণের স্থপতি, ও অন্যান্য বিশেষন অনেকের আগে লাগানো হয়ে তখন তাদের উচিত নূতন প্রজন্মের শিক্ষকদের কাছে সত্যটা তুলে ধরা।
১৯৯৬ সনের ২০ জানুয়ারী কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের খেলার মাঠে শিক্ষক কনভেনশনে শেখ আমানুল্লাহ কে সভাপতি ও আমাকে মহাসচিব করা হয়। আমি কোন ড্রয়িং রুমে বা কোন ছোট বন্ধ রুমে বসে বা ফেস বুকে নেতা হই নাই। প্রতি ৩ বৎসর পরে সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা নেতৃত্ব নির্বাচিত করি। সর্বশেষ ২০২১ সনের ৫ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে আমাদের সন্মেলন হয়েছে।
২০০৬ সনে যখন মুক্তাংগনে প্রায় ২ লক্ষ শিক্ষক নিয়ে রাজপথে বসে যাই তখন সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা মন্ত্রী এসে ১০% বেতন দেয়ার৷ ঘোষনা দিয়ে বেতন ১০০% উন্নীত করেন। শিক্ষকদের অবস্থান ছিলো গুলিস্তান মাজার থেকে পল্টন প্রীতম হোটেল। ২০০১ শহীদ মিনারে অনশনে বেগম খালেদা জিয়া ১০% বেতন এবং অবসর সুবিধা প্রদানের ঘোষনা দেন। তিনি ক্ষমতায় এসে অবসর সুবিধা প্রদান করেন। ***এই অবসর সুবিধা প্রদানে প্রফেসর এমন. শরীফুল ইসলামের অসামান্য অবদান ছিলো। আমি অবসর সুবিধা বোর্ড গঠনের অন্যতম দাবীদার হলেও অবসর সুবিধা বোর্ড থেকে আমাকে আমার পাওনা একটি টাকাও প্রদান করা হয়নি।
২০০৬ এ বেতন ১০০% পাওয়ার পরে আমি চাকুরী জাতীয়করণের জন্য সরকারী কোষাগার থেকে অর্থের প্রয়োজন নেই বলে ওয়ান ইলিভেনের সরকার কে একটা লিখিত হিসাব দিলাম। সে হিসাবটি আমি বেগম খালেদা জিয়াকে দেয়ার পরে তিনি সাবেক মন্ত্রী ড. এম. ওসমান ফারুক ও সাবেক শিক্ষা সচিব শহীদুল আলমকে ডেকে সত্যতা জানতে চাইলে তারা আমার হিসাবের পক্ষে মতামত দেন। ২০১০ সনের ১২ এপ্রিল চীন মৈত্রী সন্মেলন কেন্দ্রে বেগম খালেদা জিয়া লিখিত বক্তব্যে আবার ক্ষমতায় গেলে জাতীয়করন করার ঘোষনা দেন।
বর্তমানে এবিষয়ে জনাব তারেক রহমানের সাথে আমি কয়েকবার কথা বলেছি। তিনি বলেছেন আমার মায়ের ঘোষনা আমরা ক্ষমতায় গেলে বাস্তবায়ন করবো।
২০০৯ এ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে এ সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে জাতীয়করণের হিসাব তুলে ধরা হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
দীর্ঘ ৩৯ দিন যাবৎ আমার কিছু শিক্ষক ভাইয়েরা অবর্ননীয় কষ্ট করে প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্হান করছেন। তারা প্রধান মন্ত্রী ও তার পিতার ছবি টানিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছেন। তারা ভেবেছেন তাদের ছবি থাকলে সরকার নমনীয় হয়ে দাবী পূরন করবে। সাধারণ শিক্ষকদের সেন্টিমেন্টকে পুঁজি করে যারা একাজটি করছেন তাদের শিশুসুলভ নেতৃত্ব আন্দোলনের গতিকে কোথায় নিতে চান তা তাদেরই ভাবা দরকার। তারা নিজেদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে জেলা /উপজেলায় সংগঠন তৈরী করতে হবে। তা না করে প্রেস ক্লাবে ৩৯ কেন ৩৯০০ দিন বসেও কোন ফলে পাওয়া যাবেনা। তবে জাতীয়করণ আন্দোলনের জন্য্য এখান থেকে কতিপয় সাচ্চা মুজাহিদ তৈরী হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে তাদের নেতৃত্বে হয়তো জাতীয়করন হবে। আমার মনে হয় এখন প্রেস ক্লাবের বর্তমান আন্দোলন স্থগিত করে সকল দল মতকে নিয়ে আগামী জুন/ জুলাই মাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানন বন্ধ করে রাজপথে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিন। প্রয়োজনে আপনারা সবার মতামত নিয়ে নেতৃত্ব দিন।
যে বাসিস এর জন্ম হয়েছে আপনার আমার জন্মের আগে সে বাশিসের জন্মদাতা আপনি এ সমস্হ বালখিল্য কথা বলে শিক্ষকদের হাসাবেন না।
আজ এ পর্যন্তই। সকলে ভালো থাকুন।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
মন্তব্য করুন