সুনামগঞ্জ,শাল্লায় স্কুলে চার পদে কর্মচারী নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য, নিয়োগ বাতিলের দাবিতে মানবন্ধন
নিজস্ব প্রতিবেদক,
সুনামগঞ্জঃ জেলার শাল্লার প্রতাপপুর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির যৌথ যোগসাজশে চার পদে নিয়োগ বাণিজ্য ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী।
গতকাল (১০ এপ্রিল) বিকেলে শাল্লার বাহারা ইউনিয়নের প্রতাপপুর বাজারে বিকেল পাঁচ টায় এই মানবন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানবন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রতাপপুর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে ২১ মার্চ, ২০২৩ তারিখে একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী, একজন নৈশ প্রহরী, একজন আয়া ও একজন অফিস সহকারি পদে বিদ্যালয়ের নিয়োগ কমিটি নিয়োগ প্রদান করে। এর মধ্যে অফিস সহকারি পদে বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অনিল চন্দ্র দাসের ছেলে অপু চন্দ্র দাসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বাকি তিন পদে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে পূর্ব নির্ধারিত প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বক্তরা বলেন, নিয়োগ পরিক্ষায় জালিয়াতির করার জন্য একই প্রশ্নে সকলের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া ৬৫ জন প্রার্থীর ৬৫ জনই কিভাবে পাস করে। পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সকলকে পাস করানো হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে সেখান থেকে সভাপতি, প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষা কর্মকর্তা তাদের পছন্দমত প্রার্থী নির্বাচন করেছেন। এতে স্বাভাবিক ভাবেই বোঝা যায় এই নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় করা হয়েছে। যোগ্য প্রার্থীদের এখানে মূল্যায়ন করা হয়নি।
এসময় তারা আরও বলেন, আমরা এই নিয়োগ বাতিল চাই। নিয়োগ প্রক্রিয়ার সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাদেরও বিচার চাই। নিয়োগে মোটা অংকের টাকার লেনদেন হয়েছে। যোগ্য প্রার্থীকে বাদ দিয়ে আগে থেকেই ঠিক করে রাখাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই নিয়োগ বাতিল করতে হবে।
মানববন্ধনের এ বিষয়ে বাহারা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (প্রতাপপুর) গণেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, নিয়োগ নিয়ে যে সমালোচনা আছে সেটা আমি জানি। গ্রামবাসীর মাধ্যমে জেনেছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩ তারিখে স্থানীয় দৈনিক সিলেটের ডাক এবং জাতীয় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক মোট চার পদে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। এতে অফিস সহায়ক পদে-২৬ জন প্রার্থীসহ মোট ৬৫ জন প্রার্থী ২১ মার্চ, ২০২৩ তারিখে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। লিখিত পরীক্ষায় প্রতি পদের বিপরীতে অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থীকে ব্লাক বোর্ডে লিখে দেওয়া একই প্রশ্নপত্রে লিখিত পরীক্ষা গ্রহণ করে পরীক্ষায় সকল প্রার্থীকে উত্তীর্ণ দেখিয়ে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে প্রতি পদের বিপরীতে উত্তীর্ণ সকল প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করে পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে সজল কুমার দাস, নৈশ প্রহরী পদে রাসেন্দ্র চন্দ্র দাস, আয়া পদে ঝর্ণা রানী দাস এবং অফিস সহায়ক পদে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অনিল চন্দ্র দাসের ছেলে অপু চন্দ্র দাস কে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ দেখিয়ে ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গিরিন্দ্র চন্দ দাস এর মুঠোফোনে গত দুই দিন ধরে চেষ্টা করা হলেও তিনি ব্যস্ত আছেন, কথা বুঝছেন বলে ফোন কেটে দেন।
অভিযোগের বিষয়ে বিদ্যালয়টি ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অনিল চন্দ্র দাস এর আগে শিক্ষাবার্তা’কে বলেন, অভিযোগটি অহেতুক। এখানে মাউশি ডিজির প্রতিনিধি, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সকলেই উপস্থিত ছিল। আমরা শুধু সহযোগিতা করেছি। আমার ছেলে যোগ্য বিধায় তারা নিয়োগ দিয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ম্যানেজিং কমিটির একজন সদস্য বাদে অন্য কারও মতামত নেওয়া হয়নি প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, রেজুলেশন করেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে। তারা শুধু মিথ্যা অভিযোগ করছেন। এমন কিছু হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (শাল্লা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্বেও তিনি) মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নিয়োগের অনিয়মের বিষয়ে আমার কাছেও অভিযোগ এসেছে। নিয়োগ কমিটিতে আমি সদস্য হিসেবে ছিলাম। তাছাড়া মাউশি ডিজির প্রতিনিধিসহ নিয়োগ কমিটি মিলেই এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যেহেতু নিয়োগে আবেদন যোগ্যতা ৮ম শ্রেণি সেহেতু সাধারণভাবেই লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। এখানে কোন অনিয়ম হয়নি।
মন্তব্য করুন