সমালোচনার মুখে খুলনার দুটি মোড়ের নাম পরিবর্তনে কেসিসির সিদ্ধান্ত বদল
খুলনা প্রতিনিধি –
খুলনা মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ দুটি মোড়ের নাম পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিল খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। রোববার (৩০ এপ্রিল) কেসিসির সাধারণ সভায় নগরীর ‘শিববাড়ি মোড়ের’ নাম পরিবর্তন করে ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ এবং বর্তমান ‘বঙ্গবন্ধু চত্বরের’ নাম পরিবর্তন করে ‘শহীদ শেখ আবু নাসের চত্বর’ নামকরণের এজেন্ডা রাখা হয়। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। তীব্র সমালোচনার মুখে শনিবার বিকেলে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে কেসিসি।
কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, রোববার বেলা ১১টায় নগর ভবনে কেসিসির ১৯ তম সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছে। যা বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলরদের শেষ সাধারণ সভা। ওই সভার আলোচ্যসূচির ৫ নম্বরে রয়েছে ‘নগরীর শিববাড়ি মোড়ের নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু চত্বর এবং বর্তমান বঙ্গবন্ধু চত্বরের (শেরে বাংলা রোড ও কেডিএ এভিনিউয়ের সংযোগস্থল) নাম পরিবর্তন করে শহীদ শেখ আবু নাসের চত্বর নামে নামকরণ প্রসঙ্গে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ’। কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম এই সভার নোটিশ দিয়েছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, নগরীর ময়লাপোতা মোড়কে কয়েক বছর আগে কেসিসি ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ নামকরণ করেছিল। আর শিববাড়ি মোড় নামটি শত বছরেরও বেশি সময়ের ঐতিহ্যবাহী।
এদিকে ওই সভার নোটিশটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। কেউ কেউ এই উদ্যোগের পক্ষে মতামত ব্যক্ত করেছেন, আবার অনেকে এই উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
নগরীর বেসরকারি গাজী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. বঙ্গ কমল বসু ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে বড় করতে গিয়ে আমরা আমাদের কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে তাকে ছোট করে ফেলছি নাতো? হিমালয় সম বঙ্গবন্ধুকে চত্বরে সীমাবদ্ধ করে বড় করা যায় না।’
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট খুলনার আহ্বায়ক ও খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবীর ববি বলেন, নগরীর শিববাড়ি মোড়ের নামটি ইতিহাস বিড়জিত এবং ঐতিহ্যবাহী। ঐতিহ্যের শিববাড়ি নাম পরিবর্তন না করার দাবি জানাই। নগরীর রয়েলের মোড় থেকে শিববাড়ি মোড় পর্যন্ত যে সড়কটির নাম কেডিএ এভিনিউ সেটির নাম পরিবর্তন করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ করা যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
পূজা উদযাপন পরিষদের মহানগর সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত কুমার কুন্ডু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হঠাৎ করে এমন সিদ্ধান্ত অনেকের মধ্যেই অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। কারণ প্রায় ৩৮৫ বছর ধরে জায়গাটির নাম শিববাড়ি মোড়। বিগত জোট সরকারের সময়ে নাম পরিবর্তন করে ‘বাবরি চত্বর’ করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারা তখন তা পারেনি। তিনি বলেন, শনিবার সকালে সিটি মেয়রকে ফোন করে তিনি কেসিসির এমন সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) খুলনার সভাপতি অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খুদা বলেন, শত শত বছর আগের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের একটি জায়গার নাম সরিয়ে সেখানে বঙ্গবন্ধুর নাম স্থাপন করা কি সঠিক সিদ্ধান্ত হবে? বরং তা না করে নতুন কোনো সড়ক, এলাকা বা স্থাপনার নাম বঙ্গবন্ধুর নামে করলে কোনো সমালোচনা বা বিতর্ক হবে না।
খুলনা মহানগর ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সোহেল বিশ্বাস ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহারে নীতিমালা হওয়া উচিৎ। যত্রতত্র বঙ্গবন্ধুর নাম ব্যবহার করে যেন বিতর্ক সৃষ্টি না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। যত্রতত্র নাম ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধুকে সম্মানিত করতে গিয়ে যেন অসম্মানিত না করি।’
নগরীর বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. আমিরুল খসরু ফেসবুকে লিখেছেন ‘নতুন নামে শিববাড়ি মোড়ের কোনো ফায়দা না হলেও কারো কারো নিশ্চয়ই হবে। অসীমের সঙ্গে তুলনীয় বঙ্গবন্ধুকে আমরা কবে যথাযথ সম্মান দেখাতে শিখবো?’
আওয়ামী লীগ কর্মী ইলিয়াস হোসেন লাবু ফেসবুকে দুটি নাম পরিবর্তনের বিষয়টিকে সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছেন। এজন্য তিনি সিটি মেয়রকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন।
শনিবার বিকেলে কেসিসি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক বলেন, রোববার সাধারণ সভায় নাম পরিবর্তনসহ বেশ কয়েকটি এজেন্ডা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অনেকের আপত্তির কথা তিনি জানতে পেরেছেন। ওই দুটি এলাকার নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে না, যা আছে তাই থাকবে
মন্তব্য করুন