জাতীয় শিক্ষাক্রম রুপরেখা ২০২১, জাতীয় শিক্ষাক্রম বিস্তরণ ২০২২ ও জাতীয় শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন ২০২৩
লেখক -রাজু আহমদ
২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে সারাদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে নতুন
শিক্ষাক্রম অনুসারে বাস্তবতা ও অভিজ্ঞতাভিত্তিক পাঠদান শুরু হয়েছে।
বলা হয়ে থাকে যে, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড এবং এই শিক্ষাই হলো একটি দেশ ও জাতির উন্নয়নের চাবিকাঠি। উন্নত জীবনযাপন ও
সমাজের অগ্রগতি আনয়নে শিক্ষার বিকল্প নেই। শিক্ষাকে সঠিকভাবে রূপদানের জন্য প্রয়োজন শিক্ষাক্রম।
শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সুবিন্যস্ত পরিকল্পনাকে বলা হয় শিক্ষাক্রম। কোনো একটি শিক্ষা কার্যক্রম কী উদ্দেশ্যে পরিচালিত হবে, কী
বিষয়বস্তুর মাধ্যমে উদ্দেশ্য অর্জিত হবে; কখন, কীভাবে, কার সহায়তায় এবং কী উপকরণের সাহায্যে তা বাস্তবায়িত হবে, শিক্ষার্থীর শিখন
অগ্রগতি কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে এসবের যাবতীয় পরিকল্পনার রূপরেখাকে শিক্ষাক্রম বলে।
বিভিন্ন সংজ্ঞাকে বিশ্লেষণ করলে শিক্ষাক্রমের চারটি মূল উপাদান খুঁজে পাওয়া যায়:
উদ্দেশ্য
২. বিষয়বস্তু
৩. শিখন-শেখানো পদ্ধতি ও কৌশল
৪. মূল্যায়ন
শিক্ষাক্রমের এই চার উপাদানের অর্থ হলো- শিক্ষা কার্যক্রম কী উদ্দেশ্যে পরিচালিত হবে, কোন বিষয়বস্তু পাঠদানের মাধ্যমে উদ্দেশ্যসমূহ
অর্জিত হবে, কোন পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা তা শিখবে এবং শিক্ষার্থীর পারদর্শিতা কীভাবে মূল্যায়ন করা হবে- এ সম্পর্কিত সকল
নির্দেশনার সমষ্টিই হল শিক্ষাক্রম। এগুলো পরস্পর সম্পর্কযুক্ত, নির্ভরশীল এবং পরিপূরক।
পড়ানোর প্রক্রিয়া ঃ শিক্ষাক্রমের আবশ্যিক শর্তসমূহ পূর শর্ত ণ করার জন্য পড়ানোর প্রক্রিয়া হিসেবে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতি গ্রহণ
করা হয়েছে। অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতি একটি নমনীয় শিখন-শিক্ষণ পদ্ধতি যা শিক্ষকদের শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী হতে সাহায্য
করে। অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতি একটি চলমান শিক্ষা প্রক্রিয়াকে অনুসরণ করে। যার চারটি ধাপ রয়েছে, যথা- প্রেক্ষাপটনির্ভর অর্ভ
ভিজ্ঞতা, প্রতিফলনমূলক পর্যবেক্ষণ, বিমূর্ত ধারণায়ন এবং সক্রিয় পরীক্ষণ।
জেনে নেওয়া যাক কিভাবে এই শিক্ষাগত পদ্ধতিটি আমাদের জন্য কাজ করবে। একটি দিক হচ্ছে যে, কোন নির্দিষ্ট পাঠ শরু করার পূর্বে
একটি নির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জনের জন্য আমরা একটি পরিপূর্ণ পরিকল্পনা করে নিতে পারি। এই পরিকল্পনাটি অবশ্যই উপরে উল্লিখিত শিক্ষা
পদ্ধতির চক্রের চারটি ধাপসমৃদ্ধ হতে হবে।
১ম ধাপ, প্রেক্ষাপটনির্ভর অভিজ্ঞতায় আমাদের শিক্ষার্থীদের সেইসব পূর্ব অভিজ্ঞতা সমূহ বের করে আনতে হবে যা তাদের পূর্বের জ্ঞান
এবং/অথবা দক্ষতা, মূল্যবোধ, একটি নির্দিষ্ট যগ্যতা অর্জনে র জন্য প্রয়োজনীয় মনোভাব নির্শদে করে
দ্বিতীয় ধাপ প্রতিফলনমূলক পর্যবে ক্ষণে আমরা শিক্ষার্থীদের গঠনমূলক সমালোচনাধর্মী চিন্তাধারা এবং/ অথবা বিশ্লেষণী ক্ষমতা ব্যবহার
করতে উৎসাহিত করব যা প্রাথমিকভাবে তাদের নিজেদের মধ্যকার পূর্ব অভিজ্ঞতাগুলো উন্মোচিত করতে সাহায্য করবে। যাতে তারা
বুঝতে সক্ষম হবে যে, প্রয়োজনীয় দক্ষতাটি অর্জন করার প্রয়াসে ইতোমধ্যে তারা কিছু প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং/অথবা দক্ষতা, মূল্যবোধ,
দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করতে চলেছে।
তৃতীয় ধাপ, অর্থাৎ বিমূর্ত ধারণায়নে শিক্ষার্থীরা যেন তাদের পূর্ববর্তী জ্ঞান এবং/অথবা দক্ষতা, মূল্যবোধ, মনোভাব এর সাথে কাক্সিক্ষত
দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে যে তাত্তি¡ক দিকগুলো রয়েছে তার সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে তা নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব। এই
পর্যায়ে ‘টাস্ক’ ও ‘একটিভিটি’সমূহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে; এই অর্থে যে একটিভিটি চলমান অবস্থায় শিক্ষার্থীদের গঠনমূলক ও
সৃজনশীল চিন্তাধারা প্রকাশের পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরী হয়।
কার্যকর পরীক্ষণের ধাপে, আমরা ধরে নেই যে শিক্ষর্থীরা একটি নির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জনের পথে যা শিখেছে তা পরবর্তীতে বাস্তব জীবনেও
প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে। তাহলে কীভাবে বুঝতে পারবো যে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতির সমন্বয়ে আমাদের শিক্ষাদান পরিচালন
করতে পারছি? বিষয়টি একদম সহজ। যখন আমরা একটি কাক্সিক্ষত যোগ্যতা অর্জনের জন্য একটি আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা সাজাতে পারব
এবং তা অর্জনের ক্ষেত্রে যখন আমাদের সেশনগুলো হবে আরোও প্রাণবন্ত মিথষ্ক্রিয়া শিক্ষার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় শিখনকেন্দ্রিক প্রক্রিয়ামুখী
আরোহী পন্থা’
ব্যপক পরিবর্তন এসেছে নতুন এই শিক্ষাক্রমে ঃ
নতুন শিক্ষাক্রমে বিবেচ্য বিষয়সমুহ ঃ
শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক ও আনন্দময় পড়াশোনার পরিবেশ সৃষ্টি
বিষয় এবং পাঠ্যপুস্তকের বোঝা ও চাপ কমিয়ে দক্ষতা ও যোগ্যতায় গুরুত্ত¡ ্আরোপ
গভীর শিখন ও তার প’য়োগে গুরুত্ত¡ প’দান
মুখস্ত নির্ভরতার পরিবর্তে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শিখনে অগ’াধিকার প’দান
খেলাধুলা ও সৃজনশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে শিখনের উপর গুরুত্ত¡ প’দান
নিদৃষ্ট দিনের শিখনকাজ যেন প’তিষ্ঠানেই শেষ হয সে ধরনের শিখন কার্যক্রম পরিচালনা এবং
আনন্দময় কাজে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে হোম ওয়ার্কেও চাপ কমানো
শিক্ষার্থীর কাক্সিক্ষত জ্ঞান ঃ-
১। বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানঃ ( বিষয়ভিত্তিক ধারনা ও জ্ঞান )
২। আন্তঃবিষয়ক জ্ঞান ঃ ( একটি বিষয়ের ধারনা ও বিষয়ব¯‘র সঙ্গে অন্য বিষয়ের বিষয়ের ধারনা ও বিষয়ব¯‘র
সংযোগ করতে পারা। )
৩। বিষয়ীভত্তিক বিশেষ জ্ঞান ঃ ( বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের কাজ ও চিন্তা বুঝতে পারা )
৪। পদ্ধতিগত জ্ঞান ঃ ( কোন কাজ ধাপে ধাপে কিভাবে করতে হয় সে সম্পর্কিত জ্ঞান )
শিক্ষার্থীর কাক্সিক্ষত দক্ষতা ঃ
১। মৌলিক দক্ষতা ২। রুপান্তরযোগ্য দক্ষতা ৩। জীবিকা- সংশ্লিষ্ঠ দক্ষতা
শিক্ষার্থীর কাক্সিক্ষত মূল্যবোধ ঃ
১। দেশপে’ম ২। সম্প্রীতি ৩। পরমত সহিষ্ঞুতা ৪। শ’দ্ধা ৫। সহমর্মিতা ৬। শুদ্ধাচার
শিক্ষার্থীর কাক্সিক্ষত দৃষ্টিভঙ্গিঃ
১। ব্যক্তিগত বিশ^াস ২। ইতিবাচক সামাজিক রীতি সম্পর্কিত বিশ^াস ৩। আত্ত¡বিশ^াস।
রুপকল্প ঃ
‘‘ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত দেশপে’মিক , উৎপাদনমুখী , অভিযোজনে সক্ষম সুখী ও বৈশি^ক নাগরিক গড়ে তোলা। ”
যোগ্যতা-ঃ
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিবর্তনশীল পে’ক্ষাপটে অভিযোজনের জন্য জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গিও সমন্বয়ে অর্জিত সক্ষমতা।
রাজু আহমদ
প্রধান শিক্ষক,
মহাকাল মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়,
চেঙ্গুটিয়া, অভয়নগর, যশোর ।
মন্তব্য করুন